Concrete Admixture

কংক্রিট আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্মাণ উপাদান। এটি বিভিন্ন ধরনের কাজে ও ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ কংক্রিট কাঙ্ক্ষিত মান, কর্মক্ষমতা বা স্থায়িত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থায় অ্যাডমিক্সচার ব্যবহার করা হয়, যা কংক্রিটের গুণাগুণ পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নেয় এবং নির্মাণের জন্য আরও উপযোগী করে তোলে।

 

অ্যাডমিক্সচার কী?

অ্যাডমিক্সচার হলো এমন উপাদান যা কংক্রিটের মিশ্রণে (মিশ্রণের সময় বা তার ঠিক আগে) যোগ করা হয়। এর ফলে কংক্রিটে অনেক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যেমন—

পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা

সালফেট প্রতিরোধ ক্ষমতা

নিয়ন্ত্রিত সেটিং ও শক্ত হওয়া

কাজ করার সুবিধা (Workability)

বেশি শক্তি ও স্থায়িত্ব

অ্যাডমিক্সচার বিভিন্ন ধরনের হয়, তাদের কাজের ভিত্তিতে:

প্লাস্টিসাইজার বা ওয়াটার রিডিউসিং অ্যাডমিক্সচার

সুপারপ্লাস্টিসাইজার

রিটার্ডিং অ্যাডমিক্সচার

অ্যাক্সেলেরেটিং অ্যাডমিক্সচার

ওয়াটারপ্রুফিং ও ড্যাম্প-প্রুফিং অ্যাডমিক্সচার

করোশান ইনহিবিটিং অ্যাডমিক্সচার

 

প্লাস্টিসাইজার বা ওয়াটার রিডিউসিং অ্যাডমিক্সচার

প্লাস্টিসাইজার কংক্রিট মিশ্রণে যোগ করে এর গুণমান উন্নত করা হয় এবং নির্মাণে আরও উপযোগী করা হয়।

প্রধান উপকারিতা:

পানি/সিমেন্ট অনুপাত কমিয়ে কাজের সুবিধা ঠিক রাখা যায়

কংক্রিটের চাপ সহন ক্ষমতা (Compressive Strength) বাড়ায়

ফাটল ও সঙ্কোচন (Shrinkage) কমায়

প্লাস্টিসাইজার আসলে মিশ্রণকে তরল করে, কণাগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ কমায় এবং কংক্রিট বা মর্টারের কাজ করার সুবিধা বাড়ায়। সাধারণত ১০-১৫% পর্যন্ত পানি কমানো যায়।

 

সুপারপ্লাস্টিসাইজার

সুপারপ্লাস্টিসাইজার বা হাই রেঞ্জ ওয়াটার রিডিউসার প্লাস্টিসাইজারের চেয়ে বেশি কার্যকর। এগুলো ব্যবহার করে পানির পরিমাণ ৩০% বা তারও বেশি কমানো সম্ভব। এর ফলে হাই-স্ট্রেন্থ কংক্রিট পাওয়া যায়, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বড় নির্মাণ প্রজেক্টে ব্যবহৃত হয়।

 

রিটার্ডিং অ্যাডমিক্সচার

রিটার্ডার কংক্রিটের সেটিং টাইম কমিয়ে দেয় না, বরং সেটিং প্রক্রিয়াকে ধীর করে। ফলে কংক্রিট দীর্ঘ সময় কাজ করার উপযোগী থাকে।

উপকারিতা:

দূরের সাইটে কংক্রিট নিয়ে যাওয়া যায়

বেশি তাপমাত্রায় দ্রুত শক্ত হয়ে যাওয়া রোধ করা যায়

কনস্ট্রাকশনে Construction Joint বা Cold Joint এড়ানো যায়

অনেক ক্ষেত্রে রিটার্ডারকে প্লাস্টিসাইজার বা সুপারপ্লাস্টিসাইজারের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এগুলোকে রিটার্ডিং প্লাস্টিসাইজার বলা হয়, যা বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

 

অ্যাক্সেলেরেটিং অ্যাডমিক্সচার

অ্যাক্সেলেরেটর কংক্রিটে ব্যবহার করা হয় দ্রুত শক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া বাড়ানোর জন্য।

প্রধান সুবিধা:

ফর্মওয়ার্ক বা শাটারিং আগে খুলে ফেলা যায়

কিউরিং-এর সময় কম লাগে

শীতকালে কাজ দ্রুত করা যায়

শীতকালে কংক্রিটের কিউরিং ধীরগতির হয়। এই সময় অ্যাক্সেলেরেটর ব্যবহার করলে কংক্রিট দ্রুত শক্ত হয় এবং সময় বাঁচে।

 

ওয়াটারপ্রুফিং ও ড্যাম্প-প্রুফিং অ্যাডমিক্সচার

ওয়াটারপ্রুফিং অ্যাডমিক্সচার কংক্রিটে পানি প্রবেশ রোধ করে। এটি দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে ভাব, ফাটল বা রডে মরিচা পড়া ঠেকায়।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

কংক্রিটের ভেতরের ফাঁকফোকর বন্ধ করে

পানি শোষণ কমায়

স্থায়িত্ব বাড়ায়

বিল্ডিংকে দীর্ঘস্থায়ী করে

এগুলো পাউডার, পেস্ট বা লিকুইড—তিনভাবেই পাওয়া যায়।

 

করোশান ইনহিবিটিং অ্যাডমিক্সচার

কংক্রিটের ভেতরের রড বা স্টিল মরিচা পড়লে কাঠামোর আয়ু কমে যায়। একবার ক্ষতি হলে তা মেরামত করা ব্যয়বহুল এবং কঠিন। এই সমস্যার সমাধানে করোশান ইনহিবিটর ব্যবহার করা হয়।

এগুলো কংক্রিটের ভেতরে যোগ করলে রডকে মরিচা থেকে রক্ষা করে, ফলে বিল্ডিংয়ের স্থায়িত্ব ও সেবা আয়ু বেড়ে যায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী টেকসই কনস্ট্রাকশনে এটির ব্যবহার বাড়ছে।

Share:

Related Posts

Blogs

Concrete Admixture

কংক্রিট আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্মাণ উপাদান। এটি বিভিন্ন ধরনের